ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ঘোষণা, ‘আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং আমি তোমাদের দ্বীন ইসলামের প্রতি সন্তুষ্ট রইলাম’। (সূরা মায়িদাহ-৩) মূলত মানবজীবনের এমন কোনো সমস্যা নেই যার সমাধান ইসলাম দেয়নি। ইসলাম মানবজীবনের সব কিছুকেই সংবিধিবদ্ধ করে দিয়েছে। তাই মানুষের পক্ষে স্বেচ্ছাচারি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, আল্লাহ তায়ালা মানুষকে শুধু তার আনুগত্য করার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি জীন ও মানবজাতিকে একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি’ (সূরা জারিয়াত-৫৬)। তাই মানুষের পক্ষে আল্লাহর নির্ধারিত সীমার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
আল্লাহ যেমন কারো মুখাপেক্ষী নন, ঠিক তেমনিভাবে তিনি তার দ্বীনকেও স্বয়ংসম্পূর্ণ করে দিয়েছেন। খুব সঙ্গত কারণেই ইসলামী তাহজিব-তমদ্দুন, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, বোধ-বিশ্বাস, আদর্শ-মূল্যবোধে নিজস্ব স্বকীয়তা রয়েছে। যা অপরাপর ধর্ম ও জাতির কৃষ্টি-সংস্কৃতি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। কিন্তু দীর্ঘকালের পরিক্রমায় ইসলামের মধ্যে কিছু রসম-রেওয়াজ ও কথিত সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতির প্রচলন হয়েছে যার সাথে ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধের দূরতম সম্পর্ক নেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব সামাজিক নিয়ম হিসেবে প্রচলিত আছে। আবার ক্ষেত্র বিশেষে সেসব বিভিন্ন ধর্ম থেকে মুসলিম সংস্কৃতির মধ্যে অনুপ্রবেশ করে এমনভাবে মুসলমানদের জীবনাচারণের সাথে মিশে গেছে যে, অনেকেই অজ্ঞতাবশত এগুলোকে ইসলামী ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির স্মারক হিসেবে মনে করেন।
মূলত ৭১২ খ্রিষ্টাব্দে মোহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু অভিযান ও সিন্ধুরাজ দাহিরের পতনের মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। মুসলমানদের সিন্ধু বিজয়ের আগে উপমহাদেশের বেশির ভাগ মানুষই ছিল বৈদিক বা সনাতন ধর্মের অনুসারী। আর এই প্রতিকূল পরিবেশেই ইসলামের অগ্রযাত্রা শুরু হয় এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু জনগোষ্ঠীর অনেক রসম-রেওয়াজই মুসলিম সমাজে অনুপ্রবেশ ঘটে। যেমনÑ বর্ষবরণ, নবান্ন উৎসব, রাখি বন্ধন, গায়ে হলুদ, অষ্টমঙ্গলা, বরমূল্য যা বিয়ের যৌতুক হিসেবে মুসলিম সমাজে প্রচলিত আছে। বস্তুত, এসব মুসলিম সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের স্মারক নয় বরং বিজাতীয় ও কুফরি সংস্কৃতির অংশ। যেহেতু ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান, তাই অন্য ধর্ম ও জাতির ঐতিহ্য-সংস্কৃতি থেকে কোনো কিছু ধারকর্জ করা কোনোভাবেই কাক্সিক্ষত ও গ্রহণযোগ্য নয় বরং তা অবশ্যই গর্হিত কাজ। কোনো মুসলমান ভিনধর্মীয় বা বিজাতীয় কোনো সংস্কৃতি, উৎসব বা ঐতিহ্যের প্রতিভূ হতে পারে না। কারণ, ইসলাম আমাদের এ বিষয়ে সীমা-পরিসীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। তাই সেই সীমারেখা অতিক্রমের কোনো সুযোগ নেই।
এ প্রসঙ্গে হাদিসে রাসূল সা:-এ বলা হয়েছে, হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: যখন মদিনায় এলেন, তখন তাদের দু’টো উৎসবের দিন ছিল। তিনি বললেন, ‘এ দুটো দিনের তাৎপর্য কী?’ তারা বলল, ‘জাহেলিয়াতের যুগে আমরা এ দুটো দিনে উৎসব করতাম’ রাসূল সা: বললেন, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে এর পরিবর্তে উত্তম কিছু দিয়েছেন। তা হলো, ইয়াওমুদ্দুহা ও ইয়াওমুল ফিতর’ (আবু দাউদ)। রাসূল সা: বিজাতীয় সংস্কৃতি চর্চা থেকে বিরত থাকার জন্য মুসলমানদের কড়া হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। হাদিসের বর্ণনা মতে, ‘সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা: থেকে বর্ণিতÑ হজরত রাসূল সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্ক রাখে, সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে’ (সুনানে আহমদ, সুনানে আবু দাউদ)।
হাদিস শরিফের অপর বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘হজরত জাবির রা: থেকে বর্ণিতÑ তিনি বর্ণনা করেন যে, একদিন হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা: নবী করিম সা:-এর নিকট এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল সা:! আমরা ইহুদিদের থেকে তাদের কিছু ধর্মীয় কথা শুনে থাকি, যাতে আমরা আশ্চর্যবোধ করি। এর কিছু আমরা লিখে রাখব কি’ ? রাসূল সা: বললেন, ‘তোমরাও কি দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছ? যে রকম ইহুদি-নাসারারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে? অবশ্যই আমি তোমাদের কাছে পরিপূর্ণ, উজ্জ্বল ও পরিচ্ছন্ন দ্বীন নিয়ে এসেছি।’ হজরত মুসা আ: যদি দুনিয়ায় থাকতেন, তাহলে তাঁকেও আমার অনুসরণ করতে হতো’ (মুসনাদে আহমদ, বায়হাকি, মিশকাত, মিরকাত)। অতএব মুসলমানদের এমন কোনো ক্রিয়া-কর্ম, ঐতিহ্য-সংস্কৃতি ও উৎসবের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া সঙ্গত ও বৈধ নয় যা বিজাতীয় ও কুফরি সংস্কৃতির সাথে সম্পর্কিত হয়।
মূলত ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় ও শাহাদাতের পর ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনের গোড়াপত্তন হয় এবং তা প্রায় ২০০ বছর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ইংরেজদের দীর্ঘ শাসন ও শোষণের ফলে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই নিজেদের স্বকীয়তা হারিয়েছি। তাই আমাদের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। মানুষের জীবনাচারণ, পছন্দ-অপছন্দ-রুচিবোধ ও পোশাক-আশাকে বৈচিত্র্য এসেছে। ক্ষেত্র বিশেষে আমরা নিজেদের দ্বীনকে ভুলে গিয়ে বিজাতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত করে ফেলেছি। গা ভাসিয়ে দিয়েছি ইংরেজি সংস্কৃতির গড্ডলিকা প্রবাহে। এমনই এক পশ্চিমা সংস্কৃতি নামের অপসংস্কৃতি হচ্ছে কথিত ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’। যা মুসলিম সমাজে অসার, অনর্থক, বেহুদা ও শয়তানি কাজ হিসেবেই স্বীকৃত। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ ধরনের বেহুদা কাজ থেকে বিরত থাকতে মুসলমানদের নির্দেশ দিয়েছেন। কালামে হাকিমে বলা হয়েছে, ‘অবশ্যই বিশ্বাসীরা সফলকাম হয়েছে। যারা নামাজে বিনয়ী-নম্র। যারা অসার ক্রিয়া-কলাপ থেকে বিরত থাকে’ (সূরা আল মোমিনুন-আয়াত ১-৩)। অনত্র বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে। তখন তো শয়তান নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ করবে’ (সূরা আন নূর-২১)।
মূলত ইংরেজি নতুন বছরকে বরণ করার জন্য বিদায়ী বছরের শেষ রাত ও নতুন বছরের প্রথম প্রহরে এই উৎসব উদযাপন করা হয়। আসলে এটি কোনো মুসলিম ঐতিহ্য বা সংস্কৃতির অংশ নয়। কথিত বর্ষবরণের এই রাতে নারী-পুরুষদের অবাধ-মেলামেশার সুযোগ করে দেয়া হয়। উৎসবের নামে আতশ ও পটকাবাজি, বেহুদাপনা, মাদকসেবন, উচ্ছৃখলতা, বেহায়াপনা, পথে পথে নারী-পুরুষের উদ্দাম নৃত্য শুধু ইসলামী ঐতিহ্যে নয়, বরং কোনো সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অথচ আমাদের দেশসহ মুসলিম বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এই বিজাতীয় সংস্কৃতি ও ফেতনার এমনভাবে অনুপ্রবেশ ঘটেছে, যা থেকে পরিত্রাণ লাভ করার আপাত কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
মূলত কথিত থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের মাধ্যমে ইংরেজি বর্ষবরণ বিজাতীয়, কুফরি ও মোশরেকি সংস্কৃতির অংশ। এমনকি তা ইসলামী আকিদার সাথেও সঙ্গতিহীন। তাই কোনো মুসলমানের বিজাতীয় সংস্কৃতির ধারক-বাহক হওয়ার সুযোগ নেই। অথচ আমরা কেউ অজ্ঞতাবশত আবার কেউ জেনে শুনেই এই গর্হিত কাজটি অবলীলায় করে যাচ্ছি। তাই থার্টি ফার্র্স্ট বা ইংরেজি বর্ষবরণের উদযাপনের ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের সম্যক ধারণা থাকা আবশ্যক।
মূলত হজরত ইসা আ:-এর জন্মের ৪৬ বছর আগে রোমানরা ঔধহঁং নামে এক ঈশ্বরের পূজা শুরু করে। যাকে তারা এড়ফ ড়ভ নবমরহহরহমং বা শুরুর স্রষ্টা রূপে বিশ্বাস করত। বস্তুত, তারা বহু স্রষ্টায় বিশ্বাসী ছিল। তার মধ্যে ঔধহঁং ছিল অন্যতম। তাদের বিশ্বাস ছিল ঔধহঁং অতীত-ভবিষ্যতের সব কিছুই জানেন এবং ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাখেন। এই ঔধহঁং-এর নাম অনুসারে বছরের প্রথম মাসের নাম দেয়া হয় ঔধহঁধৎু. এই মাসে ঘটা করে তাদের এই ঈশ্বরকে খুশী করে যেন ঔধহঁং তাদেরকে পুরো বছর মঙ্গলের মধ্যে রাখেন। মূলত এই ঔধহঁং পূজা থেকে ইংরেজি বর্ষবরণের সূচনা।
সে ধারাবাহিকতায় একই সময়ে তথা খ্রিষ্টপূর্ব ’৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার সর্ব প্রথম ইংরেজি নববর্ষ উৎসবের প্রচলন করেন। মূলত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে ইংরেজি সালের বিস্তৃতি। পরবর্তীতে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নববর্ষ পালন শুরু হয়! সাধারণভাবে প্রাচীন পারস্যের সম্রাট জমশিদ খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ সালে এই নববর্ষ বা নওরোজের প্রবর্তন করেছিলেন। এ ধারাবাহিকতা এখনো পারস্যে আছে এবং ইরানে নওরোজ ঐতিহ্যগত নববর্ষের জাতীয় উৎসব হিসেবে পালিত হয়। মেসোপটেমিয়ায় এই নববর্ষ শুরু হতো নতুন চাঁদের সাথে। ব্যাবিলনিয়ায় নববর্ষ শুরু হতো ২০ মার্চ। অ্যাসিরিয়ায় শুরু হতো ২১ সেপ্টেম্বর।
মিসর ও পারসিকদের নতুন বছর শুরু হতো ২১ সেপ্টেম্বর। গ্রিকদের নববর্ষ শুরু হতো খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্ত ২১ ডিসেম্বর। রোমান প্রজাতন্ত্রের পঞ্জিকা অনুযায়ী নববর্ষ শুরু হতো ১ মার্চ এবং খ্রিষ্টপূর্ব ১৫৩-এর পরে ১ জানুয়ারিতে। ইহুদিদের নববর্ষ বা রোশ হাসানা শুরু হয় তিসরি মাসের প্রথম দিন। মোটামুটিভাবে তিসরি মাস হচ্ছে ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর। মধ্যযুগে ইউরোপের বেশির ভাগ দেশে নববর্ষ শুরু হতো ২৫ মার্চ। অ্যাংলো-স্যাকসন ইংল্যান্ডে নববর্ষের দিন ছিল ২৫ ডিসেম্বর। পয়লা জানুয়ারি নববর্ষের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট হয় ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর। ধীরে ধীরে শুধু ইউরোপে নয়, সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ পালন শুরু হয়।
মূলত ইসলাম হচ্ছে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে একমাত্র পরিপূর্ণ, সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত, নিয়ামতপূর্ণ, অপরিবর্তনীয় এবং মনোনীত জীবন বিধান। মানুষের ইহকালীন কল্যাণ, পরকালীন মুক্তি ও হেদায়েতের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। তাই এই দ্বীনের মধ্যে বিজাতীয় কোনো ঐহিত্য-সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটানো কোনোভাবেই বৈধতা পেতে পারে না। কারণ, ইসলামই হচ্ছে অদ্বিতীয় জীবন বিধান। আর যারা ইসলামের আওতার মধ্যে নেই তারা নিঃসন্দেহে কাফির-মুশরিকদের অন্তর্গত। তাই কাফির-মুশরিকদের অনুসরণও ইসলামে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। কালামে পাকে বলা হয়ছে, ‘নিশ্চয়ই সমস্ত প্রাণীর মধ্যে আল্লাহ পাকের কাছে কাফেররাই নিকৃষ্ট, যারা ঈমান আনেনি’ (সূরা আনফাল-৫৫)। আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, হে মুসলিমগণ! তোমরা ওই জালেমদের দিকে একটুও ঝুঁকবে না, অন্যথায় জাহান্নামের আগুন তোমাদের স্পর্শ করবে’ (সূরা হুদ, ১১৩)। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, হে ইমানদারগণ! শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। যে ব্যক্তি শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, সে তো অশ্লীলতা ও মন্দেরই নির্দেশ দেবে’ (সূরা নূর : ২৯)।
উপরের আলোচনা থেকে এ কথা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, বর্ষবরণের নামে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন ও বেলেল্লাপনা ইসলামী আকিদা, বোধ-বিশ্বাস, কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের পরিপন্থী। তাই ইংরেজি সালের শেষ রাতে তরুণ-তরুণীর অবাধ মেলামেশা, বেহায়াপনা, উদোম নর্তন-কুর্দন, নেশাগ্রস্ততা, অহেতুক অপচয় ও গান-বাজনা সম্পূর্ণ হারাম। ইসলাম এসব বেহুদাপনাকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছে।
ইসলাম নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশাকে কোনোভাবেই স্বীকৃতি দেয়নি। আর থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের নামে যা হয় তা জেনা-ব্যভিচারকেই উৎসাহিত করে। এ সম্পর্র্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ’ (সূরা বনি ইসরাইল : ৩২)। মূলত বর্ষবরণের নামে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রসার ঘটে এবং তা মানুষকে বিভিন্ন ধরনের পাপাচারে লিপ্ত হতে সহায়তা করে।
মূলত থার্টি ফার্স্ট বা বর্ষবরণের নামে উন্মত্ততার অনুমোদন ইসলামে নেই বরং এসব বিজাতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ। তাই মুমিন হিসেবে আমাদের কর্তব্য থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনসহ এ ধরনের সব বেহুদা কাজ থেকে বিরত থাকা। কথিত বর্ষবরণ বা উৎসবের নামে সব প্রকার অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, হইহুল্লোড় এবং নগ্নতা প্রদর্শনকে এড়িয়ে চলা। কারণ, আল্লাহ মানুষকে জীবন-যৌবনের পূজা করার জন্য সৃষ্টি করেননি বরং খলিফা হিসেবে তার একচ্ছত্র আনুগত্য করার জন্যই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। আর মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীবের মর্যাদাও দেয়া হয়েছে।
মূলত আমল বা কর্মের মাধ্যমেই মানুষকে তার শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। মানুষ সৎকাজের আদেশ ও অসৎ এবং বেহুদাপনা থেকে বিরত রাখতে হবে। কালামে পাকে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত; মানবজাতির কল্যাণ সাধানের জন্য তোমাদেরকে পাঠানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে’ ( সূরা আল ইমরান-১১০)।
লেখক : প্রবন্ধকার