ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের উদ্যোগে ড. হাফিয মুহাম্মদ মুরসির মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দীন বলেছেন, শহীদ ড. মোহাম্মদ মুরসি ছিলেন বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের প্রবাদ পুরুষ। গত ১৭ জুন আদালত এজলাসে তার মৃত্যু কোন স্বাভাবিক মৃত্যু ছিল না বরং তাকে মিশরের স্বৈরাচারি ও ফ্যাসীবাদী সরকার পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বলে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। আদালতে এজলাসে মূর্ছা যাওয়ার পর ২০ মিনিট কোন চিকিৎসা না দিয়ে ফেলে রেখে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। এমনকি এই শহীদের মরদেহ ও ময়না তদন্তের রিপোর্ট পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। এতে স্পষ্টতই প্রমাণিত হয় যে, ড. মুরসির মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না বরং তা ছিল রহস্যজনক হত্যাকান্ড। তিনি তার রহস্যজনক মৃত্যুর কারণ উদঘাটনে আন্তর্জাতিক তদন্তের আহবান জানান এবং মরহুমের শাহাদাত কবুলিয়তের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার দরকারের দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করে। মহানগরী আমীর শহীদ মুরসির পরিবার, মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতাকর্মী ও মিশরের সাধারণ জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনাও জ্ঞাপন করেন।
তিনি আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত মিশরের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ ড. মোহাম্মদ মুরসি স্বরণে শোকসভা ও দোয়া মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। দোয়া মাহফিল অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিশে শুরা সদস্য হোসাইন আহমদ প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, মিশরের জুলুমবাজ ও অবৈধ সরকার ড. মুরসির মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলে প্রচার করলেও তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ব্রিটেনের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্ট। মুরসির বন্ধু ও সহকর্মীদের উদ্ধৃতি দিয়ে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিশর সরকার সাবেক প্রেসিডেন্টকে যথাযথভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেননি। এদিকে মুরসি কারাগারে অকালে মারা যেতে পারেন বলে আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংস্থা আগে থেকেই সতর্ক করেছিল। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, সাবেক এই প্রেসিডেন্টকে কারাবন্দি রাখার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদন্ড বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি সাবেক প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুরসির অকাল মৃত্যুর আশঙ্কা জানিয়ে তার প্রতি অবহেলার জন্য দেশটির ক্ষমতাসীন আবদুল ফাত্তাহ আল সিসিকেও দায়ী করেছিল যুক্তরাজ্যের বিশেষ স্বাধীন বন্দিত্ব পর্যালোচনা প্যানেল ‘ইনডিপেনডেন্ট ডিটেনশান রিভিউ প্যানেল’। কাতার-ভিত্তিক আল-জাজিরা নিউজ নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট মুরসি গত ৭ মে সর্বশেষ শুনানির দিন কারাগারে তার অপর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যাপারে প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছিলেন, চিকিৎসার অভাবে তার জীবন বিপদাপন্ন। তিনি এই পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের বিশ্ববাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান।
তিনি বলেন, ড. মুরসি ২০১২ সালে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে মিশরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও দেশী ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ২০১৩ সালেই তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। সামরিক জান্তা তাকে দীর্ঘদিন গোপন স্থানে রেখে নির্যাতন চালায় এবং পরে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে বিচারের নামে প্রহসন করে প্রাণদন্ডসহ বিভিন্ন দন্ডে দন্ডিত করে। তিনি দীর্ঘদিন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি ও লিভারজনিত রোগে ভুগছিলেন । কিন্তু কারাবন্দি এ রাজনীতিককে যথাযথ চিকিৎসা নিতে না দিয়ে তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে মিশরের সামরিক জান্তা। ছয় বছর দিনে ২৩ ঘণ্টা নির্জন কারাগারই ছিল তার ঠিকানা। ছয় বছরে মাত্র তিনবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান মুরসি। মৃত্যুর পর মুরসির দাফনেও বাধা দেওয়া হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে নিজ শহরে দাফনের আবেদন জানালে তা নাকচ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত ১৮ জুন ভোরে কঠোর গোপনীয়তায় রাজধানী কায়রোর নসর এলাকায় তাকে দাফন করা হয়। সেখানে পরিবারের সদস্য ও মুরসির দুই আইনজীবী ছাড়া কাউকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়নি। যা মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘন। কিন্তু জুলুম-নির্যাতন করে অতীতে কখনোই ইসলামী আন্দোলনের অগ্রযাত্রা রোধ করা যায়নি। তিনি শহীদ মুরসির শোককে শক্তিতে পরিণত করে ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে বিশ্ব মুসলিমকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
হাতিরঝিল থানা পশ্চিম
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মুসা বলেছেন, মিশরের স্বৈরাচারি ও অগণতান্ত্রিক সরকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ড. মুরসিকে পরিকল্পিতভাবেই হত্যা করেছে। কারাগারে তার সাথে মানবিক আচরণ করা হয়নি। এমনকি তাকে ন্যুনতম চিকিৎসা সেবাও দেয়া হয়নি। তিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট মুরসির রহস্যজনক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং তার শাহাদাত কবুলিয়াতের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া ও মোনাজাত করেন।
তিনি আজ রাজধানীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর উত্তর হাতিরঝিল পশ্চিম থানা আয়োজিত মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট ড. মুরসির স্মরণে শোকসভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। থানা আমীর মু. আতাউর রহমান সরকারের সভাপতিত্বে দোয়া মাহফিলে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উলামা বিভাগের সভাপতি ড. মাওলানা হাবিবুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন থানা সেক্রেটারি ইউসুফ আলী মোল্লা, থানা কর্মপরিষদ সদস্য সুলতান মাহমুদ, জামায়াত নেতা আবু সাঈদ, মুজাহিদুল ইসলাম, মহিউদ্দীন পারভেজ ও নবী হোসেন প্রমূখ।
মোহাম্মদপুর থানা পশ্চিম
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহা. রেজাউল করিম বলেছেন, মিশরের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে সর্বপ্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মাদ মুরসীর আদালত কক্ষে মৃত্যু রহস্যজনক। তার অকাল মৃত্যুতে বিশ্ব ইসলামী আন্দোলন একজন অন্যতম সিপাহসালারকে হারালো। তার মৃত্যুতে মুসলিম উম্মাহর যে ক্ষতি হয়েছে তা সহজেই পুরুণীয় নয়। তিনি ড. মুরসির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং মৃত্যুর কারণ উদঘাটনে একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিটি গঠনের আহবান জানান এবং তার শাহাদাত কবুলিয়াতের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার দরকারের দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন। মহানগরী সেক্রেটারি মরহুম মুরসির শোকাহত পরিবার-পরিজন, দলীয় নেতাকর্মী ও মিশরের সাধারণ জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনাও জ্ঞাপন করেন।
তিনি আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর মোহাম্মদ থানা পশ্চিম আয়োজিত মিশনের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসীর মৃত্যুতে শোকসভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। থানা আমীর ডা. শফিউর রহমানের সভাপতিত্বে ও থানা সেক্রেটারি আব্দুল ওয়াজেদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন। উপস্থিত ছিলেন থানা কর্মপরিষদ সদস্য ফজলুল হক, জামায়াত নেতা আবু নাঈম, আলী আহমদ মজুমদার, মশিউর রহমান ও আবুল কালাম আজাদ প্রমূখ।
ড. এম আর করিম বলেন, ড. মুরসির রহস্যজনকভাবে ইন্তেকালে গোটা মুসলিম উম্মাহ গভীরভাবে শোকাভিভুত ও মর্মাহত। মিসরের অত্যন্ত জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট ড. মুরসিকে ২০১৩ সালে সেদেশের সেনা প্রধান জে: আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি অবৈধভাবে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করেন। অন্যায়ভাবে ক্ষমতাচ্যুত করার পর তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করে প্রায় ৬টি বছর অবৈধভাবে কারাগারে আটক রেখে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। তিনি কারাগারে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধা ও পরিবারের সদস্যদের সাথে যথাযথভাবে সাক্ষাতের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
তিনি বলেন, স্বৈরাচারি সিসি সরকার মিশরের জনগণ ও মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা-কর্মীদের উপর নির্মম ও নিষ্ঠুর গণহত্যা ও জুলুম-নির্যাতন এখন অব্যাহত রেখেছে। সিসি মিশর থেকে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, জনগণের ভোটাধিকার হরণ ও ন্যায়বিচার নির্বাসনে পাঠিয়ে গোটা দেশকে একটি বৃহৎ কারাগারে পরিণত করেছেন। সেখানে কোন শ্রেণির মানুষেরই জানমালের কোন নিরাপত্তা নেই। জে. সিসির সরকারের চরম জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়ে ড: মুরসি আদালতের এজলাসে রহস্যজনকভাবে ইন্তেকাল করেছেন। এ ঘটনা মিশর সরকারের জুলুম-নির্যাতনের জ্বলন্ত উদাহরণ। তাই ইসলামী আদর্শ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তার এ আত্মত্যাগ মুসলিম উম্মাহ ও সকল মুক্তিকামী জনতা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
বাড্ডা থানা পশ্চিম
বাড্ডা পশ্চিম থানার উদ্যোগে মিশরের প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুরসীর স্বরণে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে শোকসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। থানা আমীর আবু ইফাদদের সভাপতিত্ব্ েও সেক্রেটারি মাওলানা এ আর নোমানীর পরিচালনায় দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহা. রেজাউল করিম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য, মহানগরীর যুব সম্পাদক ও রামপুরা-বাড্ডা জোনের পরিচালক ডা. ফখরুদ্দীন মানিক। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
খিলক্ষেত থানা
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম বলেছেন, মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুরসি ছিলেন বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অগ্রসৈনিক। কিন্তু স্বৈরাচারি ও ফ্যাসীবাদী সরকার পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। তিনি ড. মুরসির মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন এবং তার রুহের মাগফিরাত কামনায় মহান আল্লাহ তালায়ার দরবারে দোয়া ও মোনাজাত করেন।
তিনি আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর খিলক্ষেত থানা আয়োজিত ড. মুরসির স্মরণে শোকসভা ও দোয়া মাহিফলে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। থানা আমীর হোসাইন আহমদের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বায়তুলমাল সেক্রেটারি জাহিদুল ইসলাম ও সমাজ কল্যাণ সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহ আক্কাস প্রমূখ।