ডিএনসিসি নির্বাচনে জামায়াত মনোনীতি মেয়র প্রার্থী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন তার নির্বাচনী তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। সে ধারাবাহিকতায় তিনি আজ নগরীতে শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। তিনি তাদের সমস্যার কথা ধৈর্য্য সহকারে শোনেন এবং সমাধানের আশ্বাস দেন। নগরবাসী তাকে নির্বাচিত করলে তিনি নগরীর সার্বিক উন্নয়নের সাথে সাথে শ্রমিকদের ভাগ্য উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাবেন বলে অঙ্গীকার করেন। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী উত্তরের সভাপতি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম, গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা এম আতিকুর রহমান, রিক্সা শ্রমিক নেতা মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ, পরিহরণ শ্রমিক নেতা এইচ এম আতিকুর রহমান ও শ্রমিক নেতা চৌধুরী নূরুজ্জামান প্রমূখ।
মতবিনিময় সভায় মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, মূলত শ্রমিকরাই জাতীয় উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি। বিশেষ করে তৈরি পোষাক খাত দেশীয় শ্রমিকরাই সচল রেখেছে। পাকিস্তান আমল থেকেই আমাদের দেশের ট্র্যাডিশনাল শিল্প পাটকল, বস্ত্রকল ও চিনিকল তা প্রায় বিলুপ্ত হবার পথে। আদমজিসহ বড় বড় জুট মিল এখন একেবারে বিলুপ্ত। টঙ্গি অথবা শীতলক্ষ্যা পাড়ে যে সুতা ও কাপড়ের কারখানা ছিল, সেগুলিও আর আগের অবস্থায় নেই। বিশ্বায়নের প্রভাবে এক ধরনের বি-শিল্পায়ন ঘটেছে নব্বই-এর দশকে। তবে শ্রমিক সংখ্যা হ্রাস পায়নি, বরং বৃদ্ধি পেয়েছে এবং শ্রমিকরাই জাতীয় উন্নয়নের চাকাকে সচল রেখেছেন। মূলত কিছু সংখ্যক বৃহদায়তন শিল্প বন্ধ হলেও নতুন করে অনেক শিল্প স্থাপিত হয়েছে। ফলে শ্রমিকদের কর্মসংস্থান ও শ্রমিক সংখ্যা বেড়েছে গাণিতিক হারে। কিন্তু জাতীয় উন্নয়নের রূপকার শ্রমিক শ্রেণি বরাবরই উপেক্ষার শিকার হয়েছেন। তারা এখনও তাদের নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও শ্রমিকদের জন্য ন্যুনতম মজুরী নির্ধারিত হয় নি। বিশেষ করে যারা ঢাকা নগরীতে বসবাস করেন তাদের অবস্থা খুবই করুণ। কারণ, তারা যে শ্রম দেন সে মোতাবেক পারিশ্রমিক পান না। ফলে হারভাঙ্গা পরিশ্রম করেও তাদেরকে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়। তাই শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়ন করতে তাদের নায্য অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে এক ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তনও সাধিত হয়েছে গত দেড়-দুই দশকে। বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়লেও, ছোট ও মাঝারি শিল্প তৈরি হয়েছে অনেক। এই সকল শিল্পের মালিকরা নতুন; শ্রমিকও নতুন প্রজন্মের। তার মধ্যে নারীশ্রমিকের প্রাধান্য বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। সবচেয়ে বড় শিল্প খাত হল তৈরি পোষাক খাত। প্রধানত ঢাকা ও চট্টগ্রাম দুটি বড় শহরে ও তার আশেপাশে রেডিমেড গার্মেন্টসের কারখানাগুলো অবস্থিত। গার্মেন্টস শিল্পে নিয়োজিত আছেন প্রায় তিরিশ লাখ শ্রমিক, যার ৮০ শতাংশ নারী, যাদের গড় বয়স ১৭ বছর মাত্র। আগের জুট মিল বা টেক্সটাইল মিল ঘিরে থাকত শ্রমিক কলোনি। হাজার হাজার শ্রমিক একসঙ্গে বাস করত। এখন আর সে রকম শ্রমিক কলোনি নেই। তবে ঢাকার আশেপাশে কয়েকটি অঞ্চলে গড়ে উঠেছে গার্মেন্টস পল্লী বা শ্রমিক-বস্তি, যেখানে নানা কারখানার শ্রমিক একত্রে গাদাগাদি করে বাস করে। যা সত্যিই অমানবিক।
তিনি আরও বলেন, মূলত ন্যায়-ইনসাফভিত্তিক শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠিত না থাকায় শ্রমিকরা তাদের নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। শ্রমিকদের যেমন ন্যুনতম মজুরীর ব্যবস্থা নেই, ঠিক তেমনিভাবে তাদের জন্য মানসম্পন্ন আবাসেনর সুযোগও বেশ প্রকট। নারী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে বৈষম্যের বিষয়টিও উপেক্ষা করার মত নয়। শ্রমিকদের সন্তানাদির জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা লাভের সুযোগ নেই। নগরবাসী তাকে নির্বাচিত করলে তিনি সকল ট্রেডের শ্রমিকদের জন্য নায্য অধিকার নিশ্চিত করণ, মানসম্পন্ন আবাসন, বৈষম্য দূর, সন্তানসন্ততিদের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষার সুযোগ, আপদকালীন সুদমুক্ত ঋণ সহ আর্থিক সাহায্য নিশ্চিত করে শ্রমিকদের জন্য আবাসনের সুব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দেন।
আদাবর জনকল্যাণ সোসাইটি
এদিকে রাজধানীর আদাবরে ‘আদাবর জনকল্যাণ সোসাইটি’ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন ডিএনসিসিতে জামায়াত মনোনীত মেয়র প্রার্থী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। তিনি উপস্থিত সকলের কথা গুরুত্ব দিয়ে শোনেন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তার অবস্থানের কথা জানান। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন, ডা. শফিউর রহমান, আব্দুল হান্নান, হাসানুজ্জামান ও নাসির হোসেন প্রমূখ।
মেয়র প্রার্থী তার বক্তব্যে বলেন, ঢাকা অনেক পুরনো শহর হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা আজও সেকেলে অবস্থায় রয়ে গেছে। বিশেষ করে ডিএনসিসির রাস্তাঘাটের খুবই করুণ। মূলত ঢাকা আমাদের দেশের রাজধানী শহর হলেও রাস্তাঘাট ও পরিবহণ ব্যবস্থায় খুব একটা আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। একবিংশ শতাব্দী এসে যখন ‘ উন্নত বিশ্ব ও সর্বাধুনিক পরিবহণ’ মানুষের মুখে মুখে শোভা পেলেও আমাদের রাজধানী শহরের এমন বেহাল দশা সত্যিই দুঃখজনক। তাই ডিএনসিসিকে সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন জনবান্ধব নগরীতে পরিণত করতে হলে নগরীর রাস্তাঘাটের সার্বিক উন্নয়ন ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির যানবাহনের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, মূলত সরকার ও নগর প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই ডিএনসিসি এখন খানা-খন্দকের নগরী। নগরীর প্রাণকেন্দ্রের রাস্তাগুলোতেও গর্ত দেখা যায়। ফলে প্রায়শই যাত্রী হয়রানী, সময়ের অপচয় ও অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা ঘটে। নগরগীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট এতই খারাপ যে, একটু বৃষ্টি হলে চলাচল করা কষ্টকর হয়ে ওঠে। রাস্তায় নেই ইট, পাথর, পিচ, খোয়া কোন কিছুই। মূলত এসব রাস্তা গ্রামের রাস্তার চেয়েও নিম্নমানের। মূলত রাস্তাঘাট নির্মাণ ও সংস্কার করা সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব হলেও বিষয়টি নিয়ে নগর প্রশাসন খুবই উদাসীন। তিনি নির্বাচিত হলে সরকারের সহযোগিতা নিয়ে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নগরীর রাস্তাঘাট নির্মাণ ও প্রয়োজনীয় সংস্কার করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরে আনবেন বলে অঙ্গীকার করেন।