বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তর আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যা হালাকু খানের বাগদাদ ধ্বংসের নির্মমতাকেও হার মানিয়েছে। তারা আরাকানের মুসলমানদের সেদেশ থেকে বিতাড়িত করতেই গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সুচীও রোহিঙ্গা নিধনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করছেন। তাই শুধু নিন্দা নয় বরং মিয়ানমার সরকারকে গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধে বাধ্য করতে বিশ্ববাসীকে ঐক্যবদ্ধ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি অবিলম্বে গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধ এবং রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়ে নিরাপদে স্বদেশে ফিরিয়ে নেয়ার আহবান জানান।
তিনি আজ রাজধানীতে কেন্দ্র ঘোষিত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ‘রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর মিয়ানমার সরকারের গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ বন্ধ এবং তাদের নাগরিকত্ব বহাল করে নিরাপদে স্বদেশে ফিরিয়ে নেয়ার দাবীতে’ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত এক বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে এসব কথা বলেন। বিক্ষোভ মিছিলটি মিরপুর ১ নং থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে টেকনিক্যাল মোড়ে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তর সেক্রেটারি ড. মুহা. রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটরি মাহফুজুর রহমান, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ইবনে কারীম আহমদ মিঠু, মহানগরী মজলিশে শুরা সদস্য ড. আহসান হাবীব, বেলায়েত হোসেন সুজা, শেখ নেয়ামুল করিম, এ্যাডভোকেট ইব্রাহীম খলিল ও হোসাইন আহমদ, জামায়াত নেতা শাহ আলম তুহিন, ছাত্রনেতা জামিল হোসেন, ডা. মুজাহিদুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ জঙ্গীরা রোহিঙ্গা মুসলমানদের পুড়িয়ে, জবাই ও গুলী করে নির্মম এবং নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করছে। তারা মুসলমানদের বসতবাড়ী, মসজিদ, মাদরাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করে নির্বিচারে লুটতরাজ চালাচ্ছে। বৌদ্ধ জঙ্গীদের জিঘাংসা থেকে রেহাই পাচ্ছে না নারী, শিশু ও বৃদ্ধরাও। জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ি সাম্প্রতিক সহিংসতায় তিন সহ¯্রাধিক রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছেন। নারীরা গণহারে ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। প্রায় তিন লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে অবিলম্বে জাতিসংঘ, সার্ক, ওআইসি ও আরবলীগসহ বিশ্ব সংস্থাগুলোকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং রাখাইন রাজ্যে জাতিসংঘের অধীনে শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের আহবান জানান।
তিনি বলেন, মূলত মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গা মুসলমানদের ভিনদেশী আখ্যা দিলেও এ অভিযোগের সাথে সত্যতার দূরতম সম্পর্ক নেই। ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৪৩০ থেকে ১৭৮৪ সাল পর্যন্ত ২২ হাজার বর্গমাইল আয়তনের রোহিঙ্গা স্বাধীন রাজ্য থাকলেও মিয়ানমারের রাজা বোদাওফায়া এ রাজ্য দখল করার পর বৌদ্ধ আধিপত্য শুরু হয়। ফলে রোসাঙ্গ রাজসভার বাংলা ভাষার কবি-সাহিত্যিকরা যে রাজ্যকে রোসাং ও মুসলিম জনপদ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন তা বৌদ্ধ উগ্রবাদীদের নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতায় কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। ফলে রোহিঙ্গা মুসলিমরা এখন নিজ দেশেই পরবাসী, বাস্তুহারা ও অধিকারহীন এক যাযাবর জনগোষ্ঠী। তাদের রক্তে প্রতিনিয়ত রঞ্জিত হচ্ছে মুসলিম জনপদ। সাম্প্রতিক সময়ে আরাকান রাজ্যে মারাত্মক মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। তিনি একান্ত মানবিক কারণেই রোহিঙ্গাদের জানমাল রক্ষায় বিশ^বাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
মহানগরী আমীর বলেন, আরাকানে গণহত্যা ও নির্মম নির্যাতনে গোটা বিশে^ নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও আমাদের জাতীয় সংসদে এখনও নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়নি। যা নতজানু পররাষ্ট্রনীতির পরিচায়ক। কারণ, বর্তমান সরকার নির্বাচিত নয়। দেরিতে হলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে দুর্গত ও বিপন্ন মানুষের প্রতি সহমর্মীতা প্রকাশ করেছেন। এজন্য তাকে ধন্যবাদ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকার বিভিন্ন সময়ে দাবি করেছেন প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে রোহিঙ্গা মুসলমানদের এই ক্রান্তিকালীন সময়ে বৃহত প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও চীনের সহায়তা নিয়ে মায়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাধ্য করা এটিই যথোপযুক্ত সময়। রোহিঙ্গাদের এই সংকটকালীন সময়ে জাতি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেশ ও জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে তার আরও দায়িত্বশীল ও সাহসী ভুমিকা আশা করে। তিনি জাতীয় সংসদে রোহিঙ্গা হত্যা ও নির্যাতন বিষয়ে নিন্দা প্রস্তাব পাশ এবং সরকারকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আরও কার্যকর ও গতিশীল ভূমিকা রাখার আহবান জানান।