বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম বলেছেন, সম্প্রতি ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনীদের অধিকার রক্ষার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ওপর ইসরাইলী বাহিনীর বর্বর হামলা ইতিহাসের সকল নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতাকে হার মানিয়েছে। এই সন্ত্রাসী বাহিনীর পৈশাচিক ও নির্লজ্জ হামলায় অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনী নিহত এবং দু’সহস্রাধিক আহত হয়েছেন। ইতিহাসের এই জঘন্যতম হত্যাকান্ড বিশ্ব মুসলিম কোন ভাবেই মেনে নেবে না। তিনি অবিলম্বে এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ, জেরুজালেম থেকে মার্কিন দূতাবাস প্রত্যাহার ও দখলকৃত গাজা উপত্যকার ভূমি ফিলিস্তিনীদের কাছে সমর্পনের আহবান জানান। অন্যথায় দখলদার ইসরাইলীদের সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মুসলিম উম্মাহ ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াবে।
তিনি আজ রাজধানীতে কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত গাজায় নিজেদের ভূমি ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে এবং বিশ্ব মুসলিমের পবিত্র ভূমি জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের প্রতিবাদে বিক্ষোভরত ফিলিস্তিনীদের ওপর ইসরাইলী বাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণে অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনী নিহত ও দু’সহস্রাধিক আহত হওয়ার প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে এসব কথা বলেন। বিক্ষোভ মিছিলটি মিরপুর ১ নং থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে চাইনিজ রেষ্টুরেন্টের সামনে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিশে শুরা সদস্য জিয়াউল হাসান, ডা, শফিউর রহমান, ডা. ফখরুদ্দীন মানিক, এ্যাডভোকেট ইব্রাহিম খলিল, এম আলম মুকুল, মু. শাহজাহান, মনির হোসেন গাজী, এ্যাডভোকেট মাহবুব ফেরদৌসী, আব্দুল্লাহ রেজা, মু. ইসহাক আলী, আলী হোসাইন সরকার, আব্দুল আউয়াল আজম, অধ্যাপক আনোয়ারুল করিম, আব্দুল মতিন খান, নাসির উদ্দিন, অধ্যাপক আশরাফুল আলম, সাইফুল কাদের, আতাউর রহমান সরকার ও সাইফুল ইসলাম, ছাত্রশিবিরের ঢাকা পাশ্চিমের সভাপতি আব্দুল আলীম, উত্তর সভাপতি জামিল ও পাশ্চিম সেক্রেটারি জোবায়ের প্রমূখ।
লস্কর তসলিম বলেন, দখলদার বাহিনীর হামলায় গাজা উপত্যকা এখন মৃত্যুপূরীতে পরিণত হয়েছে। মজলুম ফিলিস্তিনীদের রক্তে রঞ্জিত গাজা সহ ফিলিস্তিনের বিভিন্ন জনপদ। বর্বর ও দখলদার বাহিনীর নির্মমতা থেকে রেহাই পায়নি ফিলিস্তিনের নারী, শিশু ও বৃদ্ধরাও। সেখানে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা তাদের নিজ ভূমিতে ফেরার দাবীতে পদযাত্রার এই বর্বর হামলা চালানো হয়। এই যৌক্তিক কর্মসূচিতে ইসরাইলি বাহিনী গুলি চালিয়ে ৭০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনী হত্যা করেছে। ১৯৪৮ সালের ১৫ মে ইহুদিবাদী ইসরাইল সাড়ে সাত লাখের বেশি ফিলিস্তিনীকে তাদের বাড়ি-ঘর থেকে উচ্ছেদ করে তা অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে। মূলত ফিলিস্তিনী মুসলমানদের তীব্র প্রতিবাদ এবং বিশ্ব জনমতকে উপেক্ষা করে পবিত্র জেরুজালেমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একগুয়েমী করে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর করে আন্তর্জাতিক রীতি-নীতির প্রতি অশ্রদ্ধা ও সীমালঙ্ঘন করেছেন। এমনকি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফিলিস্তিনী মুসলমানদের উপর গণহত্যা চালানোর ব্যাপারে ইসরাইলকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মদদ দিচ্ছে বলে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান এবং জনসংখ্যার দিক থেকে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তর মুসলিম রাষ্ট্র। সর্বোপরি বাংলাদেশ ওআইসির সদস্যভূক্ত দেশ। তাই বিশ্ব মুসলিমের স্বার্থে কথা বলা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু দখলদার ইসরাইলী বাহিনী কর্তৃক গাজা উপত্যকা মুসলমানদের রক্তে রঞ্চিত হলেও সরকারের নিরবতায় ইসলামপ্রিয় তৌহিদী জনতার মনে নানা প্রশ্নে সৃষ্টি হয়েছে। মূলত বর্তমান সরকার দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে কাজ না করে নিজেদের ক্ষমতা রক্ষায় ব্যস্ত রয়েছে। তারা ইতোমধ্যেই দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে দিয়েছে। সরকারের অবৈধ ক্ষমতালিপ্সার কারণেই নির্বাচন এখন রীতিমত প্রহসনে পরিণত হয়েছে। সর্বশেষ খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে নজিরবিহীন ভোট ডাকাতি সেই প্রহসনেরই নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। কিন্তু ইতিহাস স্বাক্ষী জনগণকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে অতীতে কোন স্বৈরাচারি ও গণবিরোধী সরকারের শেষ রক্ষা হয়নি, আর কারো হবেও না। তিনি মজলুম ফিলিস্তিনীদের পক্ষে বিশ্ব জনমত সৃষ্টি ও মজলুম ফিলিস্তিনীদের রক্ষায় জাতিসংঘ, আরব লীগ, ওআইসি সহ বিশ্ব সংস্থাগুলোর প্রতি আহবান জানান।