স্বাধীনতার প্রায় পাঁচ দশক পার হবার পর দেশকে মারাত্মক বিভক্তির দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। দুর্ভাগ্য বশত: এই বিভক্তির অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। বলা বাহুল্য ১৯৭২-৭৩ সালেও স্বাধীনতার অব্যবহিত পর এই বিভক্তির চেষ্টা করা হয়েছিল। তা বেশি দূর অগ্রসর হয়নি। এবার তারা আবারো উঠে পড়ে লেগেছেন। এই বিভাজনের ভিত্তি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা না করা এবং রাজাকার-মুক্তিযোদ্ধা হওয়া না হওয়া। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মনে করে যে তারা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন, দেশ স্বাধীন করেছেন। কাজেই অন্যেরা সকলেই স্বাধীনতা বিরোধী। এ কথা সত্য যে ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানী বাহিনীর বর্বর হামলার প্রেক্ষাপটে লক্ষ লক্ষ লোকের ভারতে আশ্রয় প্রার্থনা ও ভারতীয় নেতৃত্বে মুক্তি ফৌজ গঠন ও মুক্তিযুদ্ধ, সেনাবাহিনী কর্তৃক সিভিলিয়ান সরকার প্রতিষ্ঠা রাজাকারবাহিনী গঠন প্রভৃতি নিয়ে দেশে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য যে বেসামরিক সরকার গঠন করা হয়েছিল তাতে মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম, পিডিপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াত অংশ নিয়েছিল। এই মন্ত্রী সভায় সকল দলের দু’জন প্রতিনিধি থাকলেও আওয়ামী লীগের ছিল তিন জন, ওবায়দুল্লাহ মজুমদার, সামছুল হক এবং জসিম উদ্দিন। এদের মধ্যে প্রথম দু’জন এমএনএ ছিলেন।
প্রসঙ্গত বলা দরকার যে, ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ থেকে ১৫ ডিসেম্বর এই সময়টা ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানবাসীদের জন্য মহা সংকটকাল। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রদেশব্যাপী যে অসহযোগ, হরতাল, অবরোধ, অগ্নি সংযোগ, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য এবং অবাঙ্গালী জনপদের উপর যে অত্যাচার-অবিচার শুরু হয়েছিল তার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান আর্মীর নির্মম ক্র্যাকডাউন সাড়ে সাত কোটি মানুষের জীবনে এনে দিয়েছিল অমানিশার অন্ধকার। তাদের জান, মাল ও ইজ্জতের কোনও নিরাপত্তা ছিলনা। যখন তখন গ্রেফতার, পাশবিক ও দৈহিক অত্যাচার এবং নির্যাতন পরিণত হয়েছিল নিত্যদিনের ভাগ্যলিপি। এই সময়টি ছিল দেশ প্রেমিকদের পরীক্ষা দেয়ার প্রকৃষ্ট সময়। সীমান্তপারে ভারত ভূখন্ডে আশ্রয়প্রার্থী ৭৫.৫৬ লক্ষ শরণার্থী ব্যতীত বাকী ৭ কোটি বাঙ্গালী ছিল কার্যতঃ সশস্ত্র হিংস্র পাক বাহিনীর হাতে বন্দী। এরা পাক বাহিনীর জুলুম সহ্য করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের আহার, আশ্রয় এবং অন্যান্য সহযোগিতা দিয়েছে। তারা আত্মত্যাগ করেছে, স্বজন হারিয়েছে, কিন্তু আত্মসমর্পণ করেনি। ভারতপন্থী দলগুলো ছাড়া অন্যান্য দলের নেতা-কর্মীরা তাদের সাহস জুগিয়েছে; পাক বাহিনীর হাত থেকে তাদের রক্ষা করার চেষ্টা করেছে।
দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়েছে। পক্ষান্তরে ভারতপন্থী দলগুলোর নেতা-নেত্রীরা দেশবাসীকে তোপের মুখে ঠেলে দিয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের সাথে সে দেশে প্রাণ ভয়ে শরণার্থী হয়েছিল ৭৫.৫৬ লক্ষ লোক, সাম্প্রদায়িক বিভাজন অনুযায়ী যাদের মধ্যে ছিল ৬৯.৭১ লক্ষ হিন্দু, ৫.৪১ লক্ষ মুসলিম এবং ০.৪৪ লক্ষ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী লোক। প্রবীণ রাজনীতিবিদ জাতীয় লীগ প্রধান অলি আহাদের ভাষায়, “ভাগ্যের কি পরিহাস, ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর এদেশের মৃত্যুঞ্জয়ী সাত কোটি মানুষ মুহূর্তের মধ্যে ভারতের আশ্রয়প্রার্থী শরণার্থীদের দৃষ্টিতে পাক বাহিনীর সহযোগী রূপে অভিযুক্ত হয় এবং এক পলকে পরিণত হয় এক অচ্ছ্যুত শ্রেণীতে। আরো পরিতাপের বিষয় ১৬ ডিসেম্বরের পরে অনুষ্ঠিত অত্যাচার, অবিচার, লুটপাট, খুন, রাহাজানি, ধর্ষণ-নির্যাতন ১৬ ডিসেম্বরের আগেকার মতই সমভাবে শহর নগর গ্রামের বাঙ্গালী জীবনকে বিষাক্ত করে তোলে। ভারত প্রত্যাগত মুষ্টিমেয় শরণার্থী ছিল এর জন্য দায়ী।’’ দেশ প্রেমের দলীয়করণ এ ক্ষেত্রে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলকে ভারসাম্যহীন করে তোলে এবং তারা সারা জাতিকে স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ এই দুটি শক্তিতে বিভক্ত করে নেয়। আওয়ামী লীগ ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরোধিতা এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারকেও রাজাকারে পরিণত করে- (যেমন মেজর জলিল) দেশ প্রেম একটি বিশেষ দলের পৈত্রিক সম্পত্তি হয়ে দাঁড়ায়। কাগজে কলমে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে স্থান পেলেও কার্যতঃ তা ভারতের বশংবদ রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
বলা বাহুল্য প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার ভারতে অবস্থানকালে স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতার বিনিময়ে ভারত সরকারের সাথে সাতটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। এই চুক্তিগুলোর বিষয় বস্তু ছিল নিম্নরূপঃ
১) ভারতীয় সমরবিদদের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে আধা সামরিক বাহিনী গঠন করা হবে। গুরুত্বের দিক থেকে এবং অস্ত্র-শস্ত্র এবং সংখ্যায় এই বাহিনী মূল সামরিক বাহিনী থেকে বড় এবং তাৎপর্যপূর্ণ হবে (যেমন, রক্ষী বাহিনী)।
২) ভারত থেকে সমরোপকরণ এবং অস্ত্র-শস্ত্র ক্রয় করতে হবে এবং ভারতীয় সমরবিদদের পরামর্শের ভিত্তিতে তা করতে হবে।
৩) ভারতীয় পরামর্শেই বাংলাদেশের বহিঃবাণিজ্য কর্মসূচী নির্ধারণ করতে হবে।
৪) ভারতীয় পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশের বাৎসরিক ও পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
৫) বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি ভারতীয় পররাষ্ট্র নীতির অনুরূপ হবে।
৬) ভারতের সম্মতি ছাড়া ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত কোনও চুক্তি বাতিল করা যাবে না।
৭) ডিসেম্বরে পাক-ভারত যুদ্ধের পূর্বে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ভারত যে কোনও সময় যে কোন সংখ্যায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারবে এবং এ ব্যাপারে বাধাদানকারী শক্তিকে চুরমার করে দেয়ার অধিকার তার থাকবে।
উপরোক্ত চুক্তিগুলো প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ স্বাক্ষর করেছিলেন। পরবর্তীকালে এই সাতটি চুক্তি ঈষৎ পরিমার্জিত রূপে ১৯৭২ সালের ১৯শে মার্চ ঢাকার বুকে বঙ্গভবনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমান স্বাক্ষরিত ২৫ সালা ‘বন্ধুত্ব সহযোগিতা ও শান্তি’ চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। দেশের সকল রাজনৈতিক দল এর বিরোধিতা করেছিল। তৎকালীন সরকার দেশের স্বার্থের পরিপন্থী ও জাতিদ্রোহী অবস্থান থেকে এক চুলও নড়তে রাজী ছিলনা এবং চুক্তি সম্পাদনের পূর্বে পার্লামেন্টের বা বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণেরও প্রয়োজন বোধ করেনি। ২০১০ সালে জানুয়ারি মাসে আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন তা জাতীয় স্বার্থের অনুকূল নয় এবং পার্লামেন্টেও তা পেশ করা হয়নি। ভারতকে মরণ বাঁধ ফারাক্কা চালুর অনুমতি প্রদান ছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের ঘৃণ্যতম কাজগুলোর অন্যতম। এই বাঁধ চালু করার ফলে বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হবার ঝুঁকিতে নিক্ষিপ্ত হয়। ফারাক্কায় পানি প্রত্যাহারের ফলে পদ্মা ও তার অববাহিকা অঞ্চলে সেচ ব্যবস্থায় বিপর্যয় ঘটে, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যায়, গাছ-পালার পুষ্টি উপাদানে সংকট দেখা দেয় এবং আর্সেনিকের প্রাদুর্ভাব বিপদ সীমা অতিক্রম করে। লোনা পানির প্রাদুর্ভাবও বেড়ে যায় এবং এর ফলে উপমহাদেশের অন্যতম বৃহত্তম নিউজপ্রিন্ট মিল খুলনা নিউজ প্রিন্ট মিল সহ বাংলাদেশের হাজার হাজার শিল্প ইউনিট বন্ধ হয়ে যায়। শীত মওসুমে পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও গোদাগাড়ি পয়েন্টে এখন লঞ্চ, ষ্টীমারের পরিবর্তে গরুর গাড়ী চলে। নদী এখন চর।
আমি বিভক্তি বিভাজন নিয়ে কথা বলছিলাম। বাংলাদেশে মোট রাজাকারের সংখ্যা প্রায় ৫৫,০০০ ছিল। এর মধ্যে ৩৮,০০০ (প্রায়) রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এটি ছিল একটি চাকুরি। এতে জামায়াত সমর্থকের সংখ্যা ছিল আটশ’রও নিচে। সকল দলের লোকই এই চাকুরিতে যোগ দিয়েছে এবং থানার সার্কেল অফিসাররা এদের ঢোল সহরত করে নিয়োগ দিয়েছে। সরকারি দফতরে তাদের রেকর্ড আছে। কাজেই পাইকারী হারে সবাইকে রাজাকার বলা এবং এই অজুহাতে নির্দলীয় ছেলে-মেয়েদের চাকুরী থেকে বঞ্চিত করা সম্পূর্ণভাবে একটি অনৈতিক কাজ। আওয়ামী লীগ না করলে কেউ দেশ প্রেমিক হবেন না তা নয়। এই দেশের প্রত্যেকটি নাগরিক দেশপ্রেমিক, তারা খাজনা দেন এবং দেশের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র তাদের মৌলিক অধিকারসমূহ থেকে বঞ্চিত করতে পারে না, স্বাধীনতা রক্ষার জন্য জাতীয় ঐক্য ও সংহতির প্রয়োজন। বিভক্তি দিয়ে এই ঐক্য সংহতি হতে পারে না।
এখন দলকানা প্রশাসনের কথা কিছু বলি। অতীত সম্পর্কের সুযোগে গত কয়েক মাসে বেশ কিছু শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তার সাথে কথা বলার আমার সুযোগ হয়েছে। কারুর মধ্যেই আমি স্বস্তি দেখিনি। প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা কেউ বজায় রাখতে পারছেন না। দলীয় আনুগত্যকে প্রধান বিবেচ্য বিষয় বলে গণ্য করে সরকার যাদের সামনে নিয়ে এসেছেন তাদের বেশির ভাগই অথর্ব, পেশা গত দিক থেকে অদক্ষ, লেখাপড়া ও মেধায় গড়মানের নিচে। হুকুম তামিল করার যোগ্যতা হয়ত তাদের আছে কিন্তু সচিবালয়ের বিভাগ ও এজেন্সিগুলোর নেতৃত্ব দেয়া এবং কেস বা ঘটনা বিশ্লেষণ করে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দিক নির্দেশনা প্রদান ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহায়তা করার যোগ্যতা এদের কারুরই নেই। ফলে সর্বত্র নৈরাজ্যকর একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যোগ্যতা না থাকলে টিকে থাকার জন্য তোষামোদ মূখ্য হয়ে দাঁড়ায়। অধস্তনরা যখন ঊর্ধ্বতনদের যোগ্যতার ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে পড়েন তখন আর তারা তাদের মানতে চান না। ঘোড়া ডিঙ্গিয়ে ঘাস খাওয়ার প্রবণতা তখন বৃদ্ধি পায়। আলোচনায় যে মারাত্মক বিষয়টি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে তা হচ্ছে সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনে সৃষ্ট নৈরাজ্যকর অবস্থা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন, যে তার বিভাগে এখন চেইন, অব কমান্ড প্রায় নাই বললেই চলে। তার কথা ও আদেশ নির্দেশ অধীনস্ত কর্মকর্তারা মেনে চলতে চান না। তার চোখের সামনেই তারা মন্ত্রী এমপিদের ভাই বলে সম্মোধন করে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করেন এবং তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তার ভাষায় তাদের সিনিয়র কর্মকর্তাদের এখন জুনিয়রদের কথামত চলতে হয়। এতে কোনও ব্যত্যয় ঘটলে মন্ত্রী এমপিদের কাছে তাদের বিরুদ্ধে নালিশ যায় এবং তাদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক বদলী এবং বিএনপি জামায়াতের এজেন্ট আখ্যায়িত হয়ে ওএসডি হতে হয়। এই অবস্থা সুষ্ঠু প্রশাসনের অনুকূল নয়। আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে দলীয় প্রভাবমুক্ত প্রশাসন প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ক্ষমতায় এসে অন্যান্য প্রতিশ্রুতির ন্যায় এই প্রতিশ্রুতিটিও ভঙ্গ করেছে। প্রশাসনে নিরপেক্ষ, সৎ ও মেধাবী কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে ওএসডি করার প্রবণতা প্রবল হয়েছে। কর্মকর্তাদের এবিও জে শ্রেণিভুক্ত করে তাদের নিরপেক্ষ চরিত্রকে হনন করা হচ্ছে। বলা বাহুল্য তাদের দৃষ্টিতে ‘এ’ হচ্ছে আওয়ামী লীগ, ‘বি’ বিএনপি এবং ‘জে’ জামায়াতে ইসলামী, এ শ্রেণিভুক্ত কর্মচারিদের বেলায় পদোন্নতির বিদ্যমান সকল নিয়ম কানুন শিথিল করে দেয়া হয়েছে। বিও জে শ্রেণির কর্মকর্তাদের জন্য পদোন্নতি ও সুযোগ সুবিধার সকল দুয়ার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে এ সরকারের আমলে ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত কর্মকর্তারা যতই জুনিয়র অদক্ষ ও দুর্নীতিপরায়ণ হোন না কেন পদোন্নতির বেলায় তারা প্রাধান্য পাচ্ছেন। এ অবস্থায় প্রশাসনে জুনিয়ররা সিনিয়র, সিনিয়ররা জুনিয়র হয়ে পড়ছেন। কেউ কারুর কথা শোনেন না এবং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়েছে। মন্ত্রীদের কেউ কেউ প্রকাশ্যে বিষয়টি স্বীকার করছেন, অর্থমন্ত্রী জনাব মুহিত একাধিকবার বলেছেন যে তার মন্ত্রণালয়ে কোন নির্দেশ দিলে ছয় মাসের মধ্যেও তা প্রতিপালন হয় না। মন্ত্রণালয়গুলোর অবস্থা যদি এই হয় তাহলে দেশ কোথায় যাচ্ছে ভেবে দেখুন।
চাকুরী সরকারি হোক বা বেসরকারী সব ক্ষেত্রেই মেধাকে প্রাধান্য দেয়া প্রয়োজন। সততা, নিষ্ঠা, দক্ষতা ও যোগ্যতা এবং দেশপ্রেম সরকারি চাকুরীর জন্য অপরিহার্য। এর উৎস অবারিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। যে দল ও তার অংশ সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য প্যাথলজিক্যাল টেস্ট (চধঃযধষড়মরপধষ ঃবংঃ) করতে হয়, যে দলের ছাত্রছাত্রী নেতৃত্ব অধ্যয়নকালীন সময়েই লেখাপড়া ছেড়ে টাকা পয়সা রোজগারের ধান্ধায় নামে, অনৈতিক ও অশ্লীল কাজে জড়িয়ে পড়ে তাদের কাছ থেকে রাষ্ট্র পরিচালনার মতো কর্মী আশা করা যায় না। জবরদস্তি যদি জাতির উপর তাদের চাপিয়ে দেয়া হয় তা হলে তার ফলাফল শুভ হতে পারে না। ড. শহীদুল্লাহর বিখ্যাত একটি উক্তি দিয়ে আলোচনা শেষ করছি: ‘যে দেশে প্রতিভার কদর নেই সে দেশে প্রতিভার জন্ম হয় না।