পৃথিবীর ইতিহাসে ভাষার জন্য শাহাদাত বরণ অদ্বিতীয় ও বিরল ঘটনা হলেও নেতিবাচক রাজনীতির কারণে ভাষাশহীদ ও সৈনিকদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি এবং বাংলাভাষাও সর্বজনীন হয়ে ওঠেনি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
তিনি আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মুসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ডা. ফখরুদ্দীন মানিক প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, ’৫২-র ভাষা আন্দোলন শুধু ভাষার জন্য ছিল না বরং এই আন্দোলন স্বাধিকার আন্দোলনের জোরালো ভিত্তি রচনা করেছিল। সে পথ ধরেই আমরা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলাম। কিন্তু অতীব পরিতাপের বিষয় যে, দীর্ঘকালের পরিক্রমায় আজও আমরা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও বাক-স্বাধীনতা ফিরে পাইনি। মহল বিশেষের অহমিকা ও ক্ষমতালিপ্সার কারণে ভাষা শহীদদের যথার্থভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। দীর্ঘদিন পরেও রাষ্ট্রের সকল স্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন করা সম্ভব হয়নি। এমনকি চিকিৎসা, প্রকৌশল ও আইন বিষয়ক গ্রন্থগুলোও এখনো বাংলা ভাষায় অনুবাদ করা যায়নি। যা আমাদের জাতীয় ব্যর্থতা।
তিনি ভাষা আন্দোলনে শহীদদের পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শনের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
তিনি বলেন, ১৯৪৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল। তমদ্দুন মজলিস এ আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। অধ্যাপক গোলাম আযম ছিলেন ভাষা আন্দোলনের অগ্রসৈনিক। তিনি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কাছে মানপত্রও পাঠ করেছিলেন। অধ্যাপক গোলাম আযম ডাকসুর নির্বাচিত জিএস হলেও রাজনৈতিক সংকীর্ণতা ও হীনমন্যতার কারণে ডাকসুর নামফলক থেকে তার নাম মুছে ফেলা হয়েছে। সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে কারারুদ্ধ অবস্থায় এই কিংবদন্তী ভাষাসৈনিক মৃত্যুবরণ করেছেন। মহল বিশেষের প্রতিহিংসার কারণেই ভাষা আন্দোলনের কৃতিত্ব থেকে অধ্যাপক গোলাম আযমকে বঞ্চিত করা করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। কিন্তু এতে তারা সফল হয়নি; হবেও না বরং ইতিহাসই প্রকৃত ভাষা সৈনিকদের মর্যাদা নিশ্চিত করবে। তিনি ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে স্ব স্ব অবস্থান থেকে সকলকে সক্রিয়া ভূমিকা পালনের আহবান জানান।
তিনি আরো বলেন, অন্যায়, অবিচার, অপরাজনীতি ও বৈষম্যের পরিবর্তে ন্যায়-ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় ছিল স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে মরণপণ মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করলেও পাঁচ দশক অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও স্বাধীনতার সুফলগুলো আজও আমাদের কাছে অধরায় রয়ে গেছে। গণতন্ত্র ও নির্বাচনের নামে দেশ ও জাতির সাথে চলছে নির্মম প্রহসন। নাগরিকদেরকে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। বিরোধী দলগুলো রাজপথে নির্বিঘ্নে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারছে না। রাজধানীতে জামায়াত বারবার ডিএমপির কাছে সমাবেশ করার অনুমতি চাইলেও সরকারের ভূমিকা পুরোপুরি নেতিবাচক।
এমতাবস্থায় গণমানুষের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে হলে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই। তিনি মহান একুশের চেতনায় শোষণ, বঞ্চনা, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
মহানগরী আমীর বলেন, সরকার স্বাধীনতা ও একুশের চেতনাকে পদদলিত করে দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। দলীয় আজ্ঞাবহ ও বশংবদ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানকে ‘প্রহসন কমিশন’-এ পরিণত করা হয়েছে। তারা এই দলদাস ও মেরুদন্ডহীন কমিশনের মাধ্যমে ভাঁওতাবাজীর নির্বাচন করে আবারো ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চায়। কিন্তু দেশপ্রেমী জনতা তাদের এই অপকৌশল সফল ও সার্থক হতে দেবে না।
তিনি টালবাহানা পরিহার করে সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ ও কেয়ারকেটার সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে জনগণের কাছে নতুন করে ম্যান্ডেট নেয়ার আহবান জানান। অন্যথায় দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে গণবিরোধী সরকারকে জনগণই ক্ষমতা থেকে বিদায় করবে ইনশাআল্লাহ।